বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে | বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের বৈশিষ্ট্য
অনেক সময় প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে, আজকের পোস্টে আপনাদের বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা প্রদান করবো। এছাড়াও অর্ধপরিবাহী পদার্থ এবং অপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে তা নিয়েও আলোচনা করা হবে, তাই পুরো পোস্ট মন দিয়ে পড়ুন।
বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে
যে সকল পদার্থের ভিতরে বিদ্যুৎ খুব সহজেই প্রবাহিত হতে পারে সে সকল পদার্থকে বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ বলে। পরিবাহী পদার্থকে কন্ডাক্টর বা পরিবাহি বলেও অনেকে চিনে থাকে। বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ প্রবাহ হতে পরিবাহী পদার্থে বিশেষ কোন বাধার সম্মূখীন হয় না। যেমন- রুপা, দস্তা, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি।
পরিবাহী পদার্থকে অন্যভাবেও সজ্ঞায়িত করা যায়, যে সকল পদার্থের ভ্যালেন্স ( শেষ কক্ষপথ ) ইলেকট্রন সংখ্যা চার এর কম সে সকল পদার্থকে বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ বলে।
বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের গুনাগুন বা বৈশিষ্ট্য
সকল প্রকার ধাতুই অল্প বা বেশি বিদ্যুৎ পরিবাহী। তারপরও গঠনের উপর ভিত্তি করে কিছু গুনাবলি বিরাজ করে। নিচে বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত তা উল্লেখ করা হলো-
- আপেক্ষিক রেজিস্ট্যান্স খুবই নিম্নমানের হতে হবে
- তাপমাত্র সহগ নিম্নমানের হতে হবে
- স্থায়িত্ব বেশি বা ক্ষয়রোধ ক্ষমতা বেশি মাত্রায় থাকতে হবে
- যান্ত্রিকভাবে অধিক পরিমানে টান সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে
- নমনীয়তার গুনাবলি সম্পন্ন হতে হবে
- অক্সাইড বা মরিচা প্রতিরোধের ক্ষমতা থাকতে হবে
- সোল্ডারিং করার জন্য উপযুক্ত হতে হবে ইত্যাদি।
আপনাদের জন্য আরো কিছু পোস্টঃ
বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের ১০ টি নামের তালিকা
নিম্নে ১০ টি পরিবাহী পদার্থের তালিকা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা মাইক্রো ওহম-সে.মি হিসাবে প্রদান করা হলো-
বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের ব্যবহার
সোনা, রুপা, তামা হলো উত্তম পরিবাহী। তবে সর্বোত্তম ভালো পরিবাহী হলো রুপা। আমরা অনেকে জানি না কোন পরিবাহী পদার্থ কোথায় ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত পরিবাহী পদার্থ সমূহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার তুলে ধরা হলো।
(ক) রুপাঃ সবচেয়ে উত্তম পরিবাহী হলো রুপা। রুপা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি দামি তাই সচরাচর পরিবাহী হিসাবে কাজ করতে রুপার ব্যবহার তেমন নাই বললেই চলে। তবে ভালো কোম্পানির ওয়াট-আওয়ার মিটার, কম্যুটেটরে, কার্টিজ ফিউজে রুপার তৈরি পরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করতে দেখা যায়।
(খ) তামাঃ তামার পরিবাহীতা রুপার কাছাকাছি তবে দামে কম বিধায় তামার তারকে সচরাচর বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়। যেমন- বৈদ্যুতিক ক্যবল, মোটর ওয়াইন্ডিং কাজে সুপার এনামেল কপার তার, জেনারেটরের কম্যুটেটরে এবং ওভারহেড লাইনে তামার তার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
(গ) অ্যালুমিনিয়ামঃ অ্যালুমিনিয়ামের তার ওভারহেড লাইনে বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়। দামে কম বলে ওভার হেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনে অ্যালুমিনিয়ামের তার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
(ঘ) পারদঃ বৈদ্যুতিক পরিবাহী হিসাবে মার্কারি ভ্যাপার ল্যাম্প, অ্যাম্পিয়ার আওয়ার মিটার ও রিলের ভেতরে পারদের ব্যবহার করতে দেখা যায়।
(ঙ) সীসাঃ ক্যাবলের উপরের আবরন, ব্যাটারির প্লেট, ফিউজ তার ইত্যাদি তৈরিতে সীসা ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও সোল্ডারিং লিড হিসাবে সীসাকে ব্যবহার করতে দেখা যায়।
বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে
যে সকল পদার্থের ভিতরে বিদ্যুৎ চলাচল করতে পারে না তাদেরকে বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থ বলে। অপরিবাহী পদার্থকে অন্তরক বা ইনসুলেটর বলা হয়ে থাকে। অপরিবাহী পদার্থের ভিতরে এত কম পরিমানে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, যা বাস্তবিক অর্থে উপেক্ষা করা চলে।
অন্যভাবে বলা যায়, যে সকল পদার্থের ভ্যালেন্স (শেষ কক্ষপথ) ইলেকট্রন সংখ্যা চার এর বেশি তাদেরকে অপরিবাহী পদার্থ বলে। বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের উদাহরণ হলো- শুকনা কাঠ, কাঁচ, এবোনাইট, ব্যাকেলাইট ইত্যাদি হলো অপরিবাহী পদার্থের উদাহরন।
বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের বৈশিষ্ট্য কি হওয়া উচিত
অপরিবাহী পদার্থের যে সকল গুনাবলি বা বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
- উচ্চমানের বাধা প্রদান করার ক্ষমতা
- স্থায়িত্ব বেশি বা মরিচা প্রতিরোধ ক্ষমতা
- উচ্চমানের ডাই-ইলেকট্রিক গুনসম্পন্ন ক্ষমতা
- যান্ত্রিক ভাবে মজবুত হওয়ার ক্ষমতা
- বাতাসের অতিরিক্ত আদ্রতা শোষণ করার ক্ষমতা ইত্যাদি।
বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের নাম ও তাদের ব্যবহার
আপনারা যারা বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের উদাহরণ জানতে চান তাদের সুবিধার্থে আমরা বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের নাম ও এগুলোর ব্যবহার একই সাথে তুলে ধরলাম।
(ক) মাইকাঃ মাইকা একটি ভালো মানের অপরিবাহী পদার্থ যার ডাই ইলেকট্রিক ক্ষমতা অনেক বেশি। অদাহ্য বস্তু হওয়ার কারনে যে সকল পদার্থ বেশি মাত্রার গরম হয় সেগুলোর ইনসুলেশন হিসাবে মাইকা ব্যবহার করা হয়। যেমন- বৈদ্যুতিক হিটার, হট-প্লেট, মোটরের কম্যুটেটর ও ডায়নামোতে ।
(খ) অ্যাসবেসটরঃ অ্যাসবেসটর হলো সাদা রংয়ের আঁশযুক্ত অদাহ্য একটি খনিজ পদার্থ। তাপমাত্রা বাড়ারা সাথে সাথে এর বাধা প্রদানের ক্ষমতা বা ইন্সুলেট করার ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার উত্তাপক বস্তুতে অ্যাসবেসটর বেশি ব্যবহার করা হয়।
(গ) ব্যাকেলাইটঃ ব্যাকেলাইট একটি দাহ্য পদার্থ। অতিরিক্ত চাপে ব্যাকেলাইট বেকে যায়। ব্যাকেলাইট দিয়ে সিলিং রোজ, সুইচবোর্ড, সুইচের কভার ইত্যাদি বানানো হয়ে থাকে।
(ঘ) চীনামাটিঃ ওভারহেড লাইনে পোল থেকে পরিবাহী তারকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে চীনামাটির তৈরি ইনসুলেটর ব্যবহার করতে দেখা যায়। এছাড়াও সুইচ, ফিউজ, টু-পিন ও থ্রী-পিন সকেটের বেস তৈরিতে চীনামাটি ব্যবাহার করা হয়ে থাকে।
(ঙ) কাঁচঃ কাঁচ একটি ভালো মানের অপরিবাহী পদার্থ। বাল্ব এর উপরের আবরন বা খোলের জন্য কাঁচকে বেশি ব্যবহার হতে দেখা যায়। বিদ্যুৎ সরবারহ লাইনে অনেক সময় কাঁচের তৈরি ইনসুলেটর ব্যবহার করতে দেখা যায়।
বিদ্যুৎ অর্ধপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে
যে সকল পদার্থের ভিতরে কিছু সময় বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় আবার কিছু সময় বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে না তাদেরকে অর্ধ-পরিবাহী পদার্থ বলে। অর্ধপরিবাহী পদার্থকে সেমিকন্ডাক্টর বলে। অর্ধপরিবাহী পদার্থের ভ্যালেন্স ইলেকট্রন সংখ্যা (৪) চার হয়ে থাকে। সিলিকন ও জার্মেনিয়াম হলো অর্ধপরিবাহী পদার্থের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পদার্থ।
বিদ্যুৎ অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে ইলেকট্রনিক্স বিভিন্ন কাজ করা হয়ে থাকে। ডায়োড, ট্রানজিস্টর সহ আরো অনেক কাজে এই অর্ধ পরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে যত প্রকার প্রযুক্তিগত আবিষ্কার সবকিছু অর্ধপরিবাহী পদার্থের উপাদান দিয়ে তৈরি।
শেষকথাঃ
এতক্ষন ধরে আমরা পরিবাহী, অর্ধপরিবাহী ও অপরিবাহী পদার্থের সজ্ঞা, গুনাগুন ও ব্যবাহার সম্পর্কে ধারনা অর্জন করলাম। আশাকরি পুরো পোস্ট আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আজকের পোস্ট নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। এমন নিত্যনতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট সবসময় অনুসরন করুন।- ধন্যবাদ।
আরো পড়ুনঃ
উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url