ওয়াটমিটার কি | ওয়াটমিটার সংযোগ করার পদ্ধতি
ওয়াটমিটার (Wattmeter) দিয়ে মূলত বিদ্যুতের কাজে ব্যবহৃত লোডের ওয়াট পরিমাপ করা হয়। আজকের পোস্ট পড়লে আপনি ওয়াট মিটার সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। ওয়াটমিটার সংযোগ করার পদ্ধতি জানতে পুরো পোস্টটি পড়ুন।
ওয়াটমিটার দিয়ে কোন একটি লোডের পাওয়ার নির্ণয় করা হয়ে থাকে। পাওয়ার বা ক্ষমতা হলো বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করার হার। অন্যভাবে বলা যায় সার্কিটে ব্যবহৃত লোডের ওয়াট নির্ভর করে কারেন্ট ও ভোল্টেজের গুনফলের উপর। পাওয়ার (Power) এর একক হলো ওয়াট (Watt)।
ওয়াটমিটার কি | ওয়াটমিটার কাকে বলে
বৈদ্যুতিক সার্কিটের পাওয়ার সরাসরি ওয়াট এককে যে যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়, তাকে ওয়াটমিটার বলে। ওয়াট মিটারের সাহায্যে লোডের ওয়াট পরিমাপ করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল ল্যাবে এবং কলকারখানায় ওয়াটমিটার ব্যবহার করা হয়।
ওয়াটমিটার কত প্রকার ও কি কি
পাওয়ার সাপ্লাইয়ের উপর ভিত্তি করে ওয়াটমিটার দুই প্রকার। যথা-
- এসি ওয়াট মিটার (AC Wattmeter )
- ডিসি ওয়াট মিটার (DC Wattmeter )
সংযোগের উপর ভিত্তি করে ওয়াটমিটার দুই প্রকার। যথা-
- সিঙ্গেল ফেজ ওয়াট মিটার (Single phase Wattmeter)
- থ্রী ফেজ ওয়াট মিটার (Three phase Wattmeter)
গঠনের উপর ভিত্তি করে ওয়াটমিটার চার প্রকার। যথা-
- ডায়নামোমিটার বা ইলেকট্রো ডায়নামো টাইপ ওয়াটমিটার
- ইন্ডাকশন টাইপ ওয়াটমিটার
- ইলেকট্রোস্ট্যাটিক টাইপ ওয়াটমিটার
- থার্মাল টাইপ ওয়াটমিটার
ওয়াটমিটারে কয়টি কয়েল থাকে
এনার্জি মিটারের মত ওয়াটমিটারে (Wattmeter) দুটি কয়েল থাকে। যথা- (ক) কারেন্ট কয়েল (খ) প্রেসার কয়েল। কারেন্ট কয়েল লোডের সাথে সিরিজে সংযুক্ত থাকে। ওয়াটমিটারের কারেন্ট কয়েলে মোটা তারের অল্পসংখ্যক প্যাঁচ থাকে। অল্প প্যাঁচ ও মোটা তার হওয়ার কারনে কারেন্ট কয়েলের রেজিস্ট্যান্স কম হয়ে থাকে।
অপরদিকে ওয়াটমিটারের প্রেসার কয়েল লোডের সাথে প্যারালালে সংযোগ করা হয়। ওয়াটমিটারের প্রেসার কয়েলে চিকন তারের বহুসংখ্যক প্যাঁচ থাকে। ফলে প্রেসার কয়েলের রেজিস্ট্যান্স বেশি হয়ে থাকে।
ওয়াট পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত সূত্র সমূহ
কোন সার্কিটের পাওয়ার পরিমাপের জন্য নিচের সূত্রগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- P = VI
- P = I2 * R
- P = V2/R
এখানে P = Power, I = Current, V = Voltage, R = Resistance। আমরা উপরের সূত্রগুলো ব্যবহার করে যে কোন দুইটি মান দিয়ে পাওয়ার বের করতে পারি।
ওয়াটমিটার সংযোগ করার পদ্ধতি
একটি ওয়াটমিটার মূলত চার টার্মিনাল যুক্ত ডিভাইস। আমরা জানি ওয়াট মিটারে দুইটি কয়েল থাকে একটি কারেন্ট কয়েল অপরটি প্রেসার কয়েল। একটি কয়েলের দুই প্রান্ত থাকে এমন দুইটি কয়েলে চারটি প্রান্ত থাকে। তাহলে চারটি টার্মিনালের ভিতরে দুইটি কারেন্ট কয়েলের আর দুইটি প্রেসার কয়েলের প্রান্ত।
ওয়াটমিটার সংযোগ করার আগে মাল্টিমিটার দিয়ে কারেন্ট কয়েল ও প্রেসার কয়েল খুঁজে বের করতে হবে। মাল্টিমিটার দিয়ে কয়েল দুইটি পরিমাপ করলে একটির রেজিস্ট্যান্স কম দেখাবে অন্যটির রেজিস্ট্যান্স বেশি দেখাবে। কারেন্ট কয়েলে যেহেতু মোটা তারের কম সংখ্যক প্যাঁচ থাকে তাই ওয়াটমিটারের কারেন্ট কয়েলে রেজিস্ট্যান্স কম হয়।
অপরদিকে প্রেসার কয়েলে যেহেতু চিকন তারের বহুসংখ্যাক প্যাঁচ থাকে তাই প্রেসার কয়েলের রেজিস্ট্যান্স বেশি হয়। কারেন্ট কয়েলের একটি তার ও প্রেসার কয়েলের একটি তারকে একত্র করে পজেটিভ লাইনে সংযুক্ত করতে হবে। কারেন্ট কয়েলের অন্য প্রান্তকে লোডের সাথে সিরিজে সংযুক্ত করতে হবে।
প্রেসার কয়েলের অন্যপ্রান্তকে লাইনের সাথে প্যারালালে সংযুক্ত করতে হবে। এখানে ওয়াটমিটারের কারেন্ট কয়েলের মাধ্যমে কারেন্ট লোড কারেন্টের সমান হবে এবং ওয়াটমিটারের প্রেসার কয়েলের ভোল্টেজ লোড ভোল্টেজের সমান হবে। এবাবে ওয়াটমিটারের মাধ্যমে লেডের শোষনকৃত প্রকৃত পাওয়ার পরিমাপ করা যাবে।
চিত্রে সুন্দর করে ওয়াটমিটার (Wattmeter) লোডে সংযোগ করার পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে, সেখান থেকে আরো পরিষ্কার ধারনা পাবেন বলে আশা করছি।
ওয়াটমিটার ব্যবহারে সতর্কতা
ওয়াটমিটার ব্যবহারে নিচের বিষয়গুলো অনুসরন করা উচিত-
- সাবধানে সংযোগ দিতে হবে।
- কারেন্ট কয়েল ও প্রেসার কয়েল সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে।
- পাওয়ার সাপ্লাই প্রদানের পূর্বে সব সংযোগ সঠিক আছে কিনা তা লক্ষ রাখতে হবে।
- মিটারের কাটা দেখে সঠিক পাঠ গ্রহন করতে হবে।
ওয়াটমিটারের দাম কত - ২০২৪
যারা ওয়াটমিটার কিনবেন বলে ভাবছেন কিন্তু দাম জানতে চান, আপনারা এনালগ ওয়াটমিটার গুলো ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার ভিতরে ওয়াটমিটার কিনতে পারবেন। ওয়াটমিটারের দাম নির্ভর করে কত রেঞ্জের ওয়াটমিটার কিনবো তার উপর। রেঞ্জ যত বড় হবে ওয়াটমিটারের দাম তত বেশি হবে।
ডিজিটাল ওয়াট মিটারগুলো কিনতে প্রায় ১৫,০০০ টাকা লাগতে পারে। তবে যেহেতু বর্তমানে সকল জিনিসের দাম বেশি সেক্ষেত্রে দাম কিছুটা কমবেশি হতে পারে। আপনারা অনলাইন থেকে দেখে দামের একটি আইডিয়া নিতে পারেন। অথবা কয়েক দোকান থেকে দামাদামি করেও কিনতে পারেন।
এনালগ ওয়াটমিটার কানেকশন করার পদ্ধতি
শেষকথাঃ
এতক্ষন ধরে ওয়াটমিটার সম্পর্কিত পোস্টটি পড়ে আশা করি অনেককিছু শিখতে পেরেছেন। কারো যদি ওয়াটমিটার কি বা ওয়াটমিটার (Wattmeter) কাকে বলে এবং ওয়াটমিটার সংযোগ করার পদ্ধতি কি তা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে আমাদের অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
এমন নিত্যনতুন পোস্ট পেতে সবসময় আমাদের ওয়েবসাইট অনুসরন করুন। আপনাদের কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। আশা করি আপনাদের কমেন্ট এর উপর ভিত্তি করে আমরা নতুন কোন পোস্ট লিখব। - ধন্যবাদ।
আরো পড়ুনঃ
- চেঞ্জ ওভার সুইচ কাকে বলে? চেঞ্জ ওভার সুইচ এর দাম।
- কন্টিনিউটি টেস্ট কি? কন্টিনিউটি টেস্ট কেন করা হয়।
- আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার পদ্ধতি।
- আর্থিং করার পদ্ধতি। আর্থিং কেন ব্যবহার করা হয়।
- থানকুনি পাতা চুলের উপকারিতা।
- ব্লগে ইমেজ আপলোড করার সঠিক নিয়ম।
- রবি সিমের মিনিট দেখে কিভাবে।
- বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে।
- ভিশন রাইস কুকারের দাম কত ২০২৪।
- টেলিটক ব্যালেন্স চেক করুন খুব সহজে।
- লাভ বার্ড পাখি পালন পদ্ধতি।
উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url