টিউব লাইট কি | টিউব লাইটে চোক কয়েলের কাজ কি

টিউব লাইটে চোক কয়েলের কাজ কি- টিউব লাইট সকলের পরিচিত একটি ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস। টিউব লাইটের কার্যপ্রনালী কঠিন বিধায় অনেকে টিউব লাইটের কাজ সম্পর্কে জানি না। টিউব লাইটে টিউব ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন জিনিস নিয়ে গঠিত। যার ভিতরে চোক কয়েল অন্যতম। আজকে টিউব লাইটে চোক কয়েলের কাজ কি এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আজকের আলোচনায় আপনারা আরও জানতে পারবেন টিউব লাইট কি? টিউব লাইট কত ওয়াটের হয়ে থাকে, টিউব লাইট এর দাম, টিউব লাইটে কোন গ্যাস ব্যবহার করা হয়, টিউব লাইটের স্টার্টারের কাজ কি, টিউব লাইট এর সার্কিট ডায়াগ্রাম। অর্থাৎ আপনারা একটি পোস্টের মাধ্যমে টিউব লাইটের সকল খুটিনাটি বিষয় জানতে পারবেন।

টিউব লাইট কি

টিউব লাইট আমাদের সকলের পরিচিত একটি বাতি। টিউব লাইটের ভালো নাম ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প। তবে অনেকে রড লাইট বলেও এ ল্যাম্পকে চিনে থাকে। টিউব লাইট পাওয়ার দেওয়ার সাথে সাথে জ্বলে না টিউব লাইট সুইচ অন করার ২ থেকে ৫ সেকেন্ড পরেই জ্বলে উঠে। টিউব লাইটের কর্মক্ষমতা অন্য লাইট অপেক্ষা অনেক বেশি হয়ে থাকে।
টিউব লাইট কি
টিউব লাইটে প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি। টিউব লাইটের অনেক সুবিধা ভিতরে একটি ভালো সুবিধা হলো কম পাওয়ার অপচয়ে বেশি আলো পাওয়া যায় এবং তাপ কম হয়ে থাকে।

টিউব লাইটে কি গ্যাস থাকে

আমরা অনেকেই জানিনা টিউব লাইটের ভিতর কি গ্যাস থাকে তাই অনেকে টিউব লাইটে কোন গ্যাস থাকে এটা লিখে সার্স করে। টিউব লাইটে কি গ্যাস থাকে এর সঠিক উত্তর হলো একটি কাঁচ টিউবের ভিতরে নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিসাবে আর্গন ও নিয়ন গ্যস এবং সামান্য পারদ ভর্তি করে টিউব লাইট তৈরি করা হয়।


টিউব লাইটে টিউব ছাড়াও আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে টিউব লাইট গঠিত। যেমন- স্টার্স্টার ও চোক কয়েল। টিউব লাইটের আলো চোখের জন্য ভালো বিধায় টিউব লাইটের ব্যবহার গারমেন্টস ও শিল্পকারখানায় তুলনামূলক অনেক বেশি দেখা যায়।

টিউব লাইটে চোক কয়েলের কাজ কি

টিউব লাইট জ্বালানোর সময় টিউবে প্রবাহিত কারেন্ট এর পরিমান যেন বেড়ে না যায় এ জন্য একটি লোহার কোরের উপর জড়ানো একটি কয়েলকে সিরিজে যুক্ত করা হয় একেই মূলত চোক কয়েল বলে। চোক কয়েলকে ব্যালাস্ট বলেও অনেকে জানে। আগের যে চোক কয়েল পাওয়া যেত সেগুলোকে মেটাল ব্যালাস্ট বলে প্রকাশ করা হতো বর্তমানে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্টও পাওয়া যায় বাজারে, যেখানে স্টার্টারের দরকার হয় না।

চোক কয়েল লাইনের দিকে লাইটের সাথে সিরিজে থাকে। টিউব লাইটে চোক কয়েলের দুইটি ভালো গুন রয়েছে যে কারনে মূলত টিউব লাইটে চোক কয়েল ব্যবহৃত হয়। চোক কয়েলের গুন দুটি হলো-
  1. সুইচ দেওয়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত ভোল্টেজ (৮০০ থেকে ১০০০) উৎপন্ন করা।
  2. পরবর্তিতে কারেন্ট প্রবাহকে নিয়ন্ত্রন করা।
ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্পে ব্যবহৃত ব্যালাস্টে এর মাঝে একটি বিশেষ ধরনের কয়েল ব্যবহার করা হয়। টিউব লাইট জ্বালাতে হলে টিউবের দুই দিকের ইলেকট্রোডকে গরম করতে হয়। সুইচ অন করার সাথে সাথে যে অতিরিক্ত ভোল্টেজ (৮০০-১০০০) উৎপন্ন হয় তা স্টার্টারের মাধ্যমে ইলেকট্রোড ‍দুটির মাঝে শর্ট সার্কিট হয়ে যায়। তখন মূলত স্টার্টারের ভিতর দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয়।

ইলেকট্রোড গুলো যখন গরম হয় টিউবের ভিতরের গ্যাসও ঠিক সে সময়ে তড়িৎ প্রবাহ করতে শুরু করে। গ্যাস জ্বলতে জ্বলতে যত গরম হয় লাইটের ভিতরের গ্যাসের রেজিস্ট্যান্স তত কমতে থাকে। তখন কিন্তু অপরদিকে কারেন্ট বাড়তে থাকে। যদি কারেন্ট বাড়তেই থাকে এটা ক্ষতির কারন হয়ে যাবে, তাই চোক কয়েল এ অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহকে নিয়ন্ত্রন করে।

টিউব লাইটে স্টার্টার এর কাজ কি

স্টার্টার হলো ঘোড়ার খুরের মত বাঁকানো একটি ধাতুর পাত। তবে এখানে ধাতু হিসাবে লোহা ও পিতল ব্যবহার করা হয়। দুইটি ধাতু হওয়ার কারনে এ পাতকে বাইমেটাল পাতও বলা হয়ে থাকে। প্রথমে কারেন্ট মেইন লাইন হতে টিউবের একদিকের ইলেকট্রোডের মাধ্যমে স্টার্টারের বাই মেটাল পাত হয়ে বাতির অপর প্রান্তের ইলেকট্রোডে ফিরে যায়।

যেহেতু চোক কয়েল থেকে অতি মাত্রায় ভোল্টেজ আসে তাই পাত দুটি শর্ট হয়ে বাতির দুই প্রান্তের ইলেকট্রোডগুলো গরম করতে শুরু করে। একটা সময় দেখা যার টিউব লাইটের ইলেকট্রোড দুইটি গরমে লাল হয়ে যায়, তা হতে ইলেকট্রন অপরদিকে বিচ্ছুরিত হতে শুরু করে। অর্থাৎ তখন বাতি জ্বলতে শুরু করে।

স্টার্টারের কনটাক্ট পাত অপর দিকে ঠেলে যাওয়ার ফলে বাইমেটাল পাত শর্ট সার্কিট হয়। যখন বাতি জ্বলে উঠে তখন বাইমেটাল পাত দিয়ে আর কারেন্ট চলাচল করে না। তখন টিউবের ভিতরের গ্যাস হয়েই মূলত কারেন্ট প্রবাহিত হয়। যেহেতু তখন স্টার্টারের কাজ তখন আর থাকে না তাই বাইমেটাল পাতগুলো সে সময়ে ঠান্ডা হয়ে যায় এবং শর্ট সার্কিটের মুখটিও খুলে যায়।

টিউব লাইট কত ওয়াট

আমাদের অনেকের প্রশ্ন থাকে টিউব লাইট কত ওয়াট হয়, টিউব লাইট সচরাচর বাজারে দুই ধরনের পাওয়া যায়। সাধারনভাবে বাজারে ২ ফুট টিউব লাইট ২০ ওয়াটের হয়ে থাকে। আর ৪ ফুট টিউব লাইট ৪০ ওয়াটের হয়ে থাকে। তবে ২ ফুট টিউব লাইটের প্যাকেটের গায়ে ১৮ ওয়াট লেখা থাকে এবং ৪ ফুট টিউব লাইটের প্যাকেটের গায়ে ৩৬ ওয়াট লেখা থাকে। 

যেখানে বেশি আলো দরকার হয় সেখানে ৪ ফুটের দুটি টিউব লাইটকে একত্রে সংযোগ করে দেওয়া হয়ে থাকে।

টিউব লাইটের সংযোগ চিত্র বা সার্কিট ডায়াগ্রাম

টিউব লাইটের সংযোগ চিত্র বা সার্কিট ডায়াগ্রাম

বেশির ভাগ সময় ১টি টিউব লাইটের সংযোগ চিত্র দেখেই বেশির ভাগ কাজগুলো করে থাকি টিউব লাইট জ্বালানোর জন্য। টিউব লাইটের গঠন যেহেতু একটু জটিল তাই আমরা অনেক সময় ভুলে যাই।  আজকে আপনাদের সামনে টিউব লাইটের সংযোগ চিত্র তুলে ধরলাম যারা চিত্র মনে রাখতে পারেন না এখান থেকে চিত্রটি সেভ করে আপনি টিউব লাইটের কাজটি করতে পারবেন।

টিউব লাইট কিভাবে কাজ করে

আমরা ইতিমধ্যে জানতে পারলাম টিউব লাইটে টিউব ছাড়াও আরো দুইটি জিনিস বেশ ভালো কাজ করে (১) চোক কয়েল বা ব্যালাস্ট (২) স্টার্টার বা স্বয়ংক্রিয় সুইচ। আমরা জানি চোক কয়েল লাইটের সাথে সিরিজে সংযোগ করা হয়। চোক কয়েল আমরা জানি প্রথমে ভোল্টেজ বৃদ্ধি করে পরে কারেন্ট প্রবাহকে নিয়ন্ত্রন করে। এরপর চোক কয়েল মূলত একটি সাধারন কয়েলের মত কাজ করে।
সুইচ অন করার ২ থেকে ৫ সেকেন্ড পরেই আমরা টিউব লাইট জ্বলতে দেখি। সুইচ অন করলে প্রথমে স্টার্টার অন অফ করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় এবং দুই পাশের ইলেকট্রোডকে গরম করে। ইলেকট্রোড দুইটি যে মুহূর্তে গরম হয় টিউবের ভিতরের গ্যাসগুলো তখন ইলেকট্রিক ডিসচার্জ শুরু করে দেয়। 

তখন অল্প সময়ের মাঝে স্টার্টারের শর্ট হওয়া প্রান্ত খুলে গেয়ে টিউবের গ্যাসের ভিতর দিয়েই কারেন্ট প্রবাহ শুরু করে দেয়। এতে করে গ্যাস আস্তে আস্তে গরম হতে শুরু করে দেয়। টিউবের গ্যাস গরম হলে অতি বেগুনি রশ্নির সৃষ্টি হয়। বেগুনি রশ্নি মূলত ফ্লোরোসেন্ট পাউডারের সাথে মিলিত হলে সাভাবিক আলো প্রদান করতে থাকে।

গ্যাস জ্বলতে জ্বলতে যত গরম হবে গ্যাসের রেজিস্ট্যান্স তত কমতে থাকবে আর তার সাথে আনুপাতিক হারে কারেন্ট বাড়তে থাকবে। চোক কয়েল এ বর্ধিত কারেন্ট বাধা প্রদান করে টিউব লাইটকে রক্ষা করে।

টিউব লাইট কত ভোল্টেজে চলে

আমরা জানি আমাদের বাসাবাড়িতে ২৩০ ভোল্ট এসি সাপ্লাই থাকে। কিন্তু টিউব লাইট জ্বলতে মাত্র ১১০ ভোল্ট দরকার হয় এটা আমরা অনেকে জানি না। বাদবাকি ( ২৩০ -১১০) = ১২০ ভোল্ট যে বাড়তি থাকে তা চোক কয়েল সিরিজে থাকায় সেখানে ঘাটতি হয়ে যায়।

টিউব লাইট এর দাম কত

টিউব লাইট যেহেতু ২০ ওয়াট ও ৪০ ওয়াটের আছে। তাই দুই ধরনের লাইট কিনতে আপনাকে দুই ধরনের দাম দিতে হবে। আগের পুরাতন টিউব লাইটের পুরো সেট নিতে আপনার প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরকার হবে। তাও আবার বিভিন্ন কোম্পানির উপর ভিত্তি করে দাম কিছুটা কমবেশি হতে পারে। আপনারা দোকানদারের সাথে দামদর করে জিনিস ক্রয় করবেন।


আর যারা এলইডি টিউব লাইট কিনবেন তারাও কিন্তু কোম্পানি ভেদে টিউব লাইট কিনতে পারবেন যেমন - ফিলিপস এর ২০ ওয়াট এলইডি টিউব লাইটের মূল্য ৪৫০ টাকা থেকে শুরু হয়। আবার উইনপ্রো কোম্পানির টিউব লাইটগুলো আপনারা ২২০ টাকায় পেয়ে যাবেন। এগুলোর সাথে দুই বছরের ওয়ারেন্টি সেবা প্রদান করে কোম্পানিগুলো।

শেষকথাঃ

আজকের আলোচনা যদিও টিউব লাইটের চোক কয়েলের কাজ কি এটা নিয়ে তারপরও এর সাথে আমরা টিউব লাইটের সকল বিষয় সংযুক্ত করেছি যাতে করে কেউ একবার পোস্টটি পড়লে তার যেন সকল বিষয় জানা হয়ে যায়। আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের অনেক বেশি উপকারে আসবে।

টিউব লাইটের পোস্ট পড়ে কারো যদি কিছু জানতে ইচ্ছে করে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানাবেন। আর এমন নিত্য নতুন পোস্ট পেতে উপায় কী ওয়েবসাইট সবসময় ভিজিট করার অনুরোধ রইল। -ধন্যবাদ

আরো পড়ুনঃ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url