আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার পদ্ধতি | আর্থ টেস্টার কি

আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার পদ্ধতি - আমাদের যাদের বাসায় আর্থিং করা আছে সকলের উচিত এক বছর পর পর আর্থ রেজিস্ট্যান্স টেস্ট করা। অনেক সময় পানির লেয়ার কমে যাওয়ার কারনে মাটি শুকিয়ে যায় আর এ সময় আর্থ রেজিস্ট্যান্স অনেক বেড়ে যায়। তাই প্রতিবছর ক্ষরার সময় একবার করে আর্থ রেজিস্ট্যান্স চেক করা উচিত। কিন্তু কিভাবে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে হয় এটা আমাদের অনেকের অজনা। আজকে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। আশাকরি পুরো পোস্ট মন দিয়ে পড়বেন, কারন পোস্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন হতে চলেছে।

আর্থিং হলো অতিরিক্ত কারেন্ট যা অনেকসময় আমাদের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ধাতব বডিতে জমা হয়ে থাকে সে অতিরিক্ত কারেন্ট ভূপাতিত করার ব্যবস্থাকেই আর্থিং বলা হয়। বাসাবাড়ির আর্থ রেজিস্ট্যান্স সর্বনিম্ন ১ ওহম হওয়া উচিত এবং সর্বোচ্চ ৫ ওহম পর্যন্ত গ্রহনযোগ্য। শিল্পকলকারখানার জন্য ১ ওহমের কম হওয়া উচিত। আর পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য আর্থ রেজিস্ট্যানের মান ৮ ওহম পর্যন্ত গ্রহনযোগ্য। এখন কথা হলো আমার বাসায় আর্থং করার পর আর্থ রেজিস্ট্যান্স কি সঠিক আছে কিনা তা জানার জন্য আমাদের আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে হবে। নিচে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো।

আরো পড়ুনঃ 

আর্থ রেজিস্ট্যান্স কাকে বলে | আর্থ রেজিস্ট্যান্স কি

সম্পূর্ণ আর্থিং পদ্ধতির রেজিস্ট্যান্সকেই মূলত আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলা হয়ে থাকে। অথবা বাসাবাড়ি, কলকারখানা, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির মেইন আর্থ টার্মিনাল থেকে শুরু করে আর্থ ইলেকট্রোড পর্যন্ত যে রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায় তাকেই আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। আরো সোজা করে বলতে গেলে আর্থ লিড ও আর্থের নিরবিচ্ছিন তারে যে রেজিস্ট্যান্স তাকেই আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে।

আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার পদ্ধতি

আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার পদ্ধতি

বাসাবাড়িতে আর্থং খুবই গুরুত্বপূর্ন তাই অনেকে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আর্থিং করে থাকে। আর্থিং করা হলে আর্থ রেজিস্ট্যান্স ঠিক আছে কিনা তা পরিমাপ করে দেখতে হয়ে। আর্থ রেজিস্ট্যান্স কিভাবে মাপা হয় এটা সম্পর্কে এখন জানতে পারবো। আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে আথিং রেজিস্ট্যান্স মাপা হয়। সঠিক পদ্ধতিতে আর্থিং হয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে-

✅ মেগার অথবা ডিজিটাল আর্থ টেস্টার পদ্ধতি

✅ সিরিজ টেস্ট ল্যাম্প পদ্ধতি

ডিজিটাল আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ পদ্ধতি

ডিজিটাল আর্থ রেজিস্ট্যান্স টেস্টারে চারটি টার্মিনাল থাকে। (ক) আর্থ টার্মিনাল, (খ) পটেনশিয়াল টার্মিনাল, (গ) কারেন্ট টার্মিনাল, (ঘ) ভোল্টেজ টার্মিনাল। যেখানে আর্থ টার্মিনালকে (E) দ্বারা, পটেনশিয়াল টার্মিনালকে (P) দ্বারা, কারেন্ট টার্মিনালকে (C) দ্বারা, ভোল্টেজ টার্মিনালকে (V) দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও ডিজিটাল আর্থ টেস্টারে দুইটি স্পাইক ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা কারেন্ট টার্মিনাল ও পটেনশিয়াল টার্মিনালে যুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। আর্থ  টেস্টারে লাল, সবুজ ও হলুদ তিনটি আলাদা রংয়ের তার রয়েছে। আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ পদ্ধতি-

  • প্রথমে যে আর্থ ইলেকট্রোডের আর্থিং রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে হবে তার সাথে আর্থ টার্মিনাল (E) থেকে সবুজ কালারের তার দিয়ে সংযুক্ত করে দিতে হবে।
  • তারপরে স্পাইক দুটি নিয়ে আর্থ ইলেকট্রোড থেকে ২০ থেকে ২৫ মিটার পর পর দুরে কোথাও মাটিতে পুতে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন স্পাইকগুলো ১ ফিট পরিমানে মাটিতে ঢুকে। 
  • এবার প্রথম স্পাইকটিতে পটেনশিয়াল টার্মিনালকে (P) কে এবং দ্বিতীয় স্পাইকে কারেন্ট টার্মিনালকে (C) কে সংযুক্ত করতে হবে।
  • এখন ডিজিটাল আর্থ টেস্টারের (P) (C) (E)পয়েন্টগুলেতে ক্যবলগুলো সংযুক্ত করতে হবে। তারপর আর্থ টেস্টার অন করতে হবে, সেক্ষেত্রে প্রথমে ২০০০ ওহমে পয়েন্টার সিলেক্ট করতে হবে।
  • সবগুলো পয়েন্ট লাগানো হলে ডিসপ্লেতে কিছু মান প্রদর্শন করবে। এখন যদি আমরা আর্থ টেস্টারের টেস্ট (TEST) বাটনে চাপ দেই তাহলে আমাদের আর্থ ইলেকট্রড থেকে প্রাপ্ত আর্থিং রেজিস্ট্যান্সের এর মান পাওয়া যাবে।
  • তবে আর্থিং ভালে হলে আর্থ রেজিস্ট্যন্সের মান কম পাওয়া যাবে আর যদি আর্থিং খারাপ হয় সেক্ষেত্রে আর্থ রেজিস্ট্যন্সের মান ভালো আসবে না।
  • এরপর মাঝের স্পাইক অথবা পটেনশিয়াল স্পাইককে একই লাইন থেকে ১.৫ থেকে ৩ মিটার আশেপাশে সরিয়ে পুনরায় আর্থ টেস্টারের সাহায্যে মাপ নিতে হবে। এভাবে কমপক্ষে তিন স্থান থেকে আলাদা রিডিং বা মান নিয়ে মানের গড় করে মূলত আর্থ রেজিস্ট্যন্স পরিমাপ করতে হবে।
তবে শহরে বা বস্তিতে যেখানে আর্থিং স্পাইকগুলো বসানোর জায়গা নাই সেখানে পটেনশিয়াল ও কারেন্ট স্পাইকের তারদুটি শর্ট করে তার সাথে একটি লিড তার সংযোগ করে টিউবওয়েল এর পানির পাইপের সাথে সংযোগ করতে হবে। সংযোগ শেষে উপরের মত মিটারের কাঁটা সিলেক্ট করে পাঠ নিতে হবে।

টেস্টিং বাতির সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার পদ্ধতি

আপনার বাসায় যদি আর্থ টেস্টার না থাকে তাহলে আপনি টেস্টিং বাতির সাহায্যে খুব সহজে আর্থিং সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা বোঝা যায়। এক্ষেত্রে সিরিজ টেস্ট বাতির পজেটিভ প্রান্ত সাপ্লাইয়ের সাথে আর অন্য প্রান্ত যদি আর্থিং ইলেকট্রোডের সাথে সংযোগ করার পর যদি বাতিটি ভালোভাবে জ্বলে তাহলে বুঝা যাবে আমাদের আর্থিং করা ভালো হয়েছে। আর যদি বাতির উজ্জলতা কম থাকে তাহলে বুঝা যাবে আমাদের আর্থিং ভালো করে হয় নি। আশা করি আর্থ রেজিস্ট্যান্স কিভাবে মাপা হয় তার একটি ভালো ধারনা সকলে পেয়েছেন।

আর্থ টেস্টার কি

আর্থ রেজিস্ট্যান্স মাপার কাজে যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাকে আর্থ টেস্টার বলা হয়। আর্থিং করার পরে আমাদের আর্থ রেজিস্ট্যান্স কত আসল তা আর্থ টেস্টারের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়। বর্তমানে এনালগ ও ডিজিটাল এ দুই ধরনের আর্থ টেস্টার বাজারে পাওয়া যায়। যেখানে- আর্থ টার্মিনাল (E), পটেনশিয়াল টার্মিনাল (P), কারেন্ট টার্মিনাল (C) ও ভোল্টেজ টার্মিনাল (V) থাকে। বর্তমানে বাজারে ডিজিটাল আর্থ টেস্টার পাওয়া যায় যার চিত্র উপরে দেখানো হয়েছে।

আর্থ রেজিস্ট্যান্স কমানোর উপায়

আর্থ রেজিস্ট্যান্স সবসময় কম রাখা সবচেয়ে ভালো। যদি অর্থিং রেজিস্ট্যান্স বেশি হয় তাহলে আমাদের আর্থিং যে কারনে করছি তার কোন সফলতা আসবে না। তাই আর্থ রেজিস্ট্যান্সের মান সবসময় কম রাখা উচিত। নিচের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে আর্থ রেজিস্ট্যান্স একেবারে জিরো(০) করা না গেলেও কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করে আর্থ রেজিস্ট্যান্স কমাতে পারি-
  • মাটির আদ্রতা বাড়িয়ে আর্থ রেজিস্ট্যান্স কমানো যায়। এক্ষেত্রে আর্থ ইলেকট্রোডের পাশে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়। ক্ষরার সময় পানি দিয়ে মাটিকে ভিজা অথবা স্যাতস্যাতে রাখার জন্য পাইপ আর্থিং ব্যবহার করা হয়।
  • আর্থ ইলেকট্রোডের আশেপাশে লবন ও চারকল প্রদান করে আর্থ রেজিস্ট্যান্স কমানো যায়। আর্থিং করার সময় ইলেকট্রোডের আশেপাশে লেয়ার করে প্রথম লেয়ারে চারকল পরের লেয়ারে লবন এমন করে ৩/৪ লেয়ার করার মাধ্যমেও কিন্তু আর্থ রেজিস্ট্যান্স কমানো যায়।
  • আর্থ ইলেকট্রোডের দৈঘ্য বৃদ্ধি করে আর্থ রেজিস্ট্যান্স কমানো যায়। আর্থ ইলেকট্রোডের দৈর্ঘ দ্বিগুন করলে আর্থ রেজিস্ট্যান্স ৪০% পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।
  • একই সাথে দুটি ইলেকট্রোডকে পাশাপাশি প্যারালালে সংযোগ করেও কিন্তু আর্থ রেজিস্ট্যান্স কমানো সম্ভব। যদিও এ পদ্ধতি তেমন ব্যবহার করা হয় না।
উপরের যে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে কিছুটা হলেও আর্থ রেজিস্ট্যান্সের মান কমানো যায়। বর্তমানে বেশিরভাগ স্থানে রড আর্থিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে যদি আর্থ রেজিস্ট্যান্সের মান কমাতে হয় আপনাকে রডের দৈঘ্য বাড়াতে হবে।

ডিজিটাল আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার পদ্ধতি দেখুন ভিডিওতে

শেষকথাঃ

আমরা এতক্ষন ধরে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারলাম। আশাকরি আজকে আর্থিং রেজিস্ট্যান্স কি, আর্থ রেজিস্ট্যান্স কমানোর উপায় সম্পর্কে ভালো একটি ধারনা পেলেন। আপনাদের যদি আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ পদ্ধতি নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর এমন নিত্যনতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার অনুরোধ রইলো। -ধন্যবাদ।


আরো পড়ুনঃ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url