ককাটেল পাখি পালন পদ্ধতি | ককাটেল পাখির দাম
ককাটেল পাখি পালন সকলেই পাখি ভালো লাগার থেকেই শুরু করে। ছোট থেকে বৃদ্ধ সকলেই এ পাখির প্রেমে পড়ে যায়। বর্তমানে সখের বসে পাখি পালনের পাশাপাশি অনেকে বানিজ্যিক ভাবেও পাখির পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অনেক সুন্দর বলে যে কোন দেশের পাখিকে এ দেশে পোষ মানানো যায়।
আজকে আমরা সকলের প্রিয় এবং পছন্দের ককাটেল পাখি পালন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। পোস্টটি পড়ে আরো জানতে পারবেন, ককাটেল পাখির দাম বাংলাদেশ, ককাটেল পাখি চেনার উপায়, ককাটেল পাখির খাবার তালিকা, ককাটেল পাখি বছরে কতবার ডিম পাড়ে, ককাটেল পাখির ডিম পাড়ার লক্ষন ইত্যাদি। পুরো পোস্ট পড়লে আপনারা ককাটেল পাখি পালনে অনেক অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পারবেন।
ককাটেল পাখির নামকরন
ককাটেল মূলত কাকাতুয়া পরিবারের এক ধরনের পাখি। ককাটেল অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের এন্ডেমিক প্রানিগুলোর একটি। বন্য প্রানী হিসেবে অন্য কোথাও না পাওয়া গেলেও খাঁচায় পোষা ককাটেল পাখি পুরো বিশ্বের যে কোন খানে গেলেই পেয়ে যাবেন।
ককাটেল পাখির নমনীয়তা, দারুন শীশ বাজানো এবং সহজে পোষ মানার কারনে ককাটেল পাখি সহজেই সকলের মনে জায়গা নিয়ে নিয়েছে। ককাটেল পাখিকে ক্যারিওন এবং উইরো নামেও অনেকে ডেকে থাকে। ককাটেল পাখি কথা বলতে না পারলেও ককাটেল পাখি অত্যান্ত বন্ধুত্ব সুলভ হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ বাজরিগার পাখি পালন পদ্ধতি - ২০২৪।
বাজরিগার পাখির পরেই বেশির ভাগ পাখি প্রেমীকদের কাছে ককাটেল পাখির নাম শোনা যায়। ককাটেল পাখির মাথার টোপরটি পাখির সৌন্দর্য অনেকগুন বাড়িয়ে দেয়। ককাটেল পাখির আয়ুষ্কাল ১০ থেকে ১৫ বছর হয়ে থাকে। আবার গবেষনায় দেখা গেছে সঠিক যত্ন নিলে পাখিগুলো ৩২ বছর বাঁচে এমন উদাহরন রয়েছে ।
ককাটেল পাখির মিউটেশন
ককাটেল পাখি আমাদের দেশে যদিও বাহিরে তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু খাঁচায় বিভিন্ন মিউটেশনের ককাটেল পাখি আমরা দেখতে পারি। আমাদের দেশে যে সকল ককাটেল পাখি পাওয়া যার তার ভিতরে গ্রে ককাটেল, লুটিনো, সিনামন পার্ল, লুটিনো পার্ল, হোয়াইট ফেস, এলবিনো, পাইড ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে বেশির ভাগ পাখি পালকদের কাছে গ্রে ককাটেল ও লুটিনো ককাটেল বেশি দেখা যায়।
ককাটেল পাখি পালন পদ্ধতি
ককাটেল অতি ভদ্র প্রজাতির একটি পাখি। আমরা সখের বসে সকলেই বাসার বারান্দয় এক জোড়া ককাটেল পাখি পালন করতে পারি। যেহেতু ককাটেল পাখির দাম তুলনামূলক একটু বেশি তাই মৃত্যুর ঝুকির কথা বিবেচনা করে অনেকে ককাটেল পাখি পালন করতে চায় না। আজকে আপনাদের যে সকল পদ্ধতি বলে দিব তা যদি আপনারা পালন করতে পারেন তাহলে ককাটেল পাখি আপনার কাছেও ভালো থাকবে।
চলুন দেখি ককাটেল পাখি পালন পদ্ধতি কি কি
- যেহেতু পাখির সাইজ একটু বড় তাই বড় মাপের খাঁচায় ককাটেল পাখি পালন করতে হবে।
- পাখির বেশির ভাগ রোগ হয় পানি থেকে, তাই নিয়মিত পানি পরিবর্তন করে দিবেন। সবচেয়ে ভালো হয় সকালে নিয়মিত নতুন পানি দেওয়া এবং সন্ধ্যায় পানি খাঁচা থেকে নিয়ে নেওয়া।
- খাবার দেওয়ার সময়টাকে নির্ধারিত করে দেওয়া। যেমন প্রতিদিন সকাল ৯ টার সময় খাবার দিবেন আবার দুপর ৩ টার সময় খাবার চেক করবেন।
- প্রতিদিন খাবার ভালোকরে পরিষ্কার করে দিবেন যাতে করে কোন ময়লা বা খারাপ কিছু না থাকে।
- পাখির খাঁচা এমন যায়গায় রাখবেন যেন আলোবাতাস পর্যাপ্ত পরিমানে পায়। বেশি রোদ থাকে এমন স্থানে পাখির খাঁচা রাখা জাবে না, এতে পাখির সমস্যা হতে পারে।
- শীতকালে পাখির খাঁচা ভালো করে ঢেকে রাখতে হবে। শুধু সামনে খোলা যায় এমন ব্যবস্থা করবেন, যাতে করে দিনে সামনের অংশ খুলে রাখতে পারেন।
- সাপ্তাহে স্প্রে মেশিন দিয়ে ২ থেকে ৩ দিন গোসল করার অভ্যাস করতে পারেন। এতে পাখির মেজাজ ফুরফুরে থাকবে।
- পাখির খাঁচায় পাখির খেলনা কিনতে পাওয়া যায় সেগুলো দিয়ে রাখবেন এতে করে পাখি খেলতে পারবে।
- সাপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাক খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
- ছোলাবুট ভিজিয়ে রেখে নরম করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন এতে করে পাখির শারীরিক গঠন ভালো থাকে। তবে খেয়াল রাখবেন বেশিক্ষন বাশি ছোলা যেন পাখি না খায় তাতে পাখির পেট খারাপ করতে পারে।
উপরের যে নিয়মগুলো আলোচনা করা হলো এগুলো ভালোভাবে মেনে চললে আপনিও ককাটেল পাখি পালন করতে পারেন।
ককাটেল পাখির খাবার তালিকা
ককাটেল পাখির খাবার সীড মিক্স হিসাবে চিনা, সূর্যমুখীর বীজ, চিকন পোলাওয়ের ধান, কুসুম ফুলের বিচি, বিভিন্ন প্রকারের ক্যানারি, সরিষা ইত্যাদি খাওয়াবেন নিয়মিত। এছাড়া ভেজানো ছোলা বুট সাপ্তাহে ৩দিন দিবেন, বিভিন্ন শাক পাতা ও ফল সাপ্তাহে ২ দিন খাবার তালিকায় রাখবেন। সাপ্তাহে পাখিকে একদিন সেদ্ধ ডিম দিতে পারেন এর ফলে পাখির শরীর অনেক ভালো থাকে।
শাক হিসাবে পালং শাক, লালশাক, ধনে পাতা, কলমি শাক, পুদিনা পাতা, সজনে পাতা, সীম এর বিচি ইত্যাদি দিতে পারেন তবে একই দিনে সবগুলো না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভাগ করে দিবেন তাহলে বেশি ভালো হয়। ফল হিসাবে আপেল, তরমুজ, পেপে, নাশপাতি, পেয়ারা, আমড়া ইত্যাদি খেতে দিবেন মাঝে মাঝে।
সজনে পাতায় বেশি পরিমান ক্যালসিয়াম থাকায় এটি খাওয়ানোর অভ্যাস করাবেন। সমুদ্রের ফেনা কিনতে পাওয়া যায় সেগুলোকে খাওয়ানোর অভ্যাস করবেন। ঠান্ডার সময় পানি ফুটিয়ে পরে ঠান্ডা করে হালকা গরম পানি খাওয়াবেন।
ককাটেল পাখি চেনার উপায়
আমরা অনেক সময় ককাটেল পাখির মেল ও ফিমেল চিনতে ভুল করি। আর এ ভুলের কারনে আমরা বেশি প্রতারিত হই ককাটেল পাখি কিনার সময়। অনেকে আছে যারা পাখির ছেলে ও মেয়ে না চিনার করনে বছরের পর বছর হয় দুটো ছেলে আর নয়তো দুটো মেয়ে পাখিকে তাদের খাঁচায় পুশে যাচ্ছেন। বাচ্চা অবস্থায় মেল ও ফিমেল চিহ্নিত করা খুব কঠিন কাজ।
ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে প্রথমবার পালক বদলানো পর্যন্ত সকল ককাটেল পাখিকে ফিমেল পাখির মত দেখা যায়। বাচ্চা ফুটার ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে প্রথমবার পালক বদলে ককাটেল পাখির। এ সময় পাখির ডানার নিচে বিন্দু বিন্দু হলুদ দাগ দেখা যায়। এ সময় ককাটেল পাখির স্ত্রী ও পুরুষের আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।
পুরুষ পাখি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে এদের শরীরের ডানার নিচের হলুদ অথবা সাদা দাগগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়। পুরুষ পাখির ঝুটি ও গলার ধুরস পালকগুলো আস্তে আস্তে গাঢ় হলুদ রং ধারন করে। গলার নিচের কমলা দাগটি অনেক বেশি উজ্জল আকার ধারন করে। পুরুষ পাখি প্রাপ্ত বয়স্ক হলে গলার ডাক তীব্র আকার ধারন করে।
অপরদিকে স্ত্রী পাখির ঝুটি ও গলার পালক ধুসর থাকতে দেখা যায় এক্ষেত্রে মেয়ে পাখির গলার কমলা দাগটা হালকাই থেকে যায়। ডানার নিচের যে সাদা বা হলুদ দাগগুলো থাকে এগুলো পুরুষ পাখির মত মুছে যায় না, ডানার নিচে দাগগুলো দেখাই যায়। স্ত্রী পাখির গলার ডাক তেমন কর্কশ হয় না। এভাবেই আমরা খুব সহজে মেল ও ফিমেল ককাটেল পাখিকে সহজে চিহ্নিত করতে পারি।
ককাটেল পাখির ডিম পাড়ার লক্ষন
ককাটেল পাখি বছরে ৩ থেকে ৪ বার ডিম পাড়ে। প্রতিবার ডিম পাড়ার সময় ২টি থেকে ৫টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে দেখা যায়। ককাটেল পাখি ডিম পাড়ার আগে বেশ কিছু লক্ষন দেখা যায়, আমরা যদি সে লক্ষনগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারি তাহলে পাখির খাঁচায় ডিম পাড়ার জন্য আলাদা বাসার ব্যবস্থা করা যায়। তাহলে চলুন দেখি ডিম পাড়ার আগে ককাটেল পাখির লক্ষনগুলো কেমন হয়।
আরো পড়ুনঃ টিউব লাইটের চোক কয়েলের কাজ কি?
যদি ককাটেল পাখির মেল ও ফিমেল ঠিক থাকে তাহলে ডিম পাড়ার আগে মেল পাখিটি অনেক জোরে জোরে শীশ বাজাতে থাকে। তখন ফিমেল পাখিটি ডিম পাড়ার ভাড়ে ঢুকবে আর বের হবে। মাঝে মাঝে ভাড়ের ভিতরে অনেক্ষন ধরে বসে থাকতে দেখা যায়। এমন কিছুদিন চলার পর পাখি ডিম পাড়ে। তবে পাখি ডিম পাড়ার আগে যদি বাসায় অপরিচিত কেউ আসে তাহলে পাখি কিন্তু ডিম পাড়তে চায় না।
পাখির ডিম পাড়ার আগে আরেকটি লক্ষনীয় বিষয় হলো আগের চেয়ে পাখি বেশি বেশি খাবার খাবে ফিমেল পাখিটি। এ সময় আপনারা পাখির ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের কোর্সটি করিয়ে নিবেন তাহলে ডিমের ভিতরে থাকা বাচ্চাগুলো বেশ নাদুস নুদুস হবে।
ককাটেল পাখির দাম কত
ককাটেল পাখির দাম বাংলাদেশ লিখে অনেকে সার্স করেন, ককাটেল পাখির দাম নির্ভর করে পাখির আলাদা মিউটশনের উপর। যেমন- হোয়াইট ফেস ককাটেল পাখির দাম ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। পার্ল পেইড ককাটেল পাখিগুলো ২ হাজার ৮০০ টাক থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। লোটিনো ককাটেল পাখিগুলো ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজর টাকা।
পার্ল ককাটেল পাখিগুলো ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা। গ্রে ককাটেল পাখিগুলো আপনারা ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার ৫০০ টাকায় পেয়ে যাবেন। আপনারা আপনাদের বাজেটের উপর ভিত্তি করে যে কোন মিউটেশনের পাখি ক্রয় করতে পারেন।
ককাটেল পাখির খাঁচার সাইজ কত
ককাটেল পাখির সাইজ যেহেতু বড় তাই তাদেরকে বাজরিগার পাখির খাঁচায় রাখা যাবে না। তাদের জন্য
একটু বড় সাইজের খাঁচা নিধারন করতে হবে। খাঁচা ছোট হলে পাখির লেজ কিন্তু বাঁকা হয়ে যাবে এতে করে পাখির আকর্ষনীয় লুক নষ্ট হয়ে যাবে। ককাটেল পাখির খাঁচার সর্বনিম্ন সাইজ হলো ১৮ ইঞ্চির বা ১.৫ ফিটের।
যার চতুর্দিকে ১৮ ইঞ্চি বজায় থাকবে। আর আপনার বাজেট ভালো হলে লম্বায় ১৮ ইঞ্চি বা দেড় ফিট এবং প্রস্থ ৩ ফিট বা ৩৬ ইঞ্চির খাঁচাটি কিনবেন, এর ফলে পাখি ভালোভাবে মিট করতে পারবে।
ককাটেল পাখির চিকিৎসা পদ্ধতি
আমরা যারা ককাটেল পাখি পালন করি অনেককে বলতে শোনা যায় ককাটেল পাখির পাতলা পায়খানার কথা। যাদের পাখি পাতলা পায়খানা করে তাদের খেয়াল রাখতে হবে পাখির কৃমি হয়েছে কিনা, যদি কৃমি হয়ে থাকে তাহলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কৃমির ঔষধ খাওয়ালেই পাখির পাতলা পায়খানা ভালো হয়ে যাবে।
আপনারা পিপরাজিন (Piprazine) নামক ঔষধটিও কৃমির জন্য ব্যবহার করতে পারেন। ছোট পাখি হলে ২ ফোটা করে আর পাখি প্রাপ্ত বয়ষ্কহলে ৪ফোটা করে খেতে দিতে পারেন। তবে সরাসরি না দিয়ে পানিতে মিক্সড করে দিলে ভালো ফল পাবেন।
পাখির সুস্থ্যতার জন্য সবচেয়ে যে বিষয়টি লক্ষ রাখবেন তা হলো পানি, আপনি প্রতিদিন নিয়মিত পানির পাত্র পরিষ্কার করে পানি চেন্জ করে দিবেন। এতে করে পাখির বেশির ভাগ রোগ হয় না।
শীতে ককাটেল পাখির যত্ন
শেষকথাঃ
আজকে আপনাদের সামনে ককাটেল পাখি পালন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করি যারা ককাটেল পাখি ভালোবাসেন তাদের জন্য আজকের পোষ্টটি খুবই দরকারি হবে। পোস্ট পড়ে যদি কারো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আর এমন নিত্যনতুন পোস্ট পেতে উপায় কী ওয়েবসাইট ভিজিট করার অনুরোধ রইলো।
উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url