বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়
বিদ্যুৎ ছাড়া এক মূহুর্ত চলা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে বর্তমানে। আমাদের সকল স্থরে বিদ্যুৎ এমনভাবে মিশে গেছে কোন কাজ বিদ্যুৎ ছাড়া চলে না। কিন্তু এ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রতি মাসে অনেক টাকা বিদ্যুৎ বিল প্রদান করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ কম্পানিগুলোতে। অনেক সময় এত বেশি বিদ্যুৎ বিল আসে যেটা নিয়ে আমাদের অনেক সন্দেহ তৈরি হয়। আমরা বোকার মত বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে বকাবকি করে থাকি। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে আলোচনা করবে বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় নিয়ে। আপনারা যদি পুরো পোষ্ট মন দিয়ে পড়েন তাহলে আপনার বাসাবাড়িতেও বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
বর্তমানে আধুনিক জীবনে আমরা এতই আধুনিক হয়ে উঠেছি যে, বিদ্যুতের তৈরি সকল জিনিস ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত। বিশেষ করে শীতকালে আমাদের কিছু ডিভাইস না চললেও গরমে কিন্তু বাসাবাড়ির বিদ্যুতের সবকিছু নিয়মিত চলছে। আর এ কারনে গরমে বেশি বিদ্যুৎ বিল আসছে। আজকে আমরা বিদ্যুৎ বিল যেন কম আসে তার কয়েকটি টিপস নিয়ে আলোচনা করবো।
বিদ্যুৎ বিল কমাতে বাতির সঠিক ব্যবহার
আধুনিক বাতির ব্যবহার বিদ্যুৎ বিল কমাতে সক্ষম। আধুনিক বাতি বলতে বিজ্ঞানিরা ক্রমাগত গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে কিভাবে বাতি আবিষ্কার করলে বিল কমানো যায়। বর্তমানে এলইডি বাতি বাজারে বিভিন্ন ওয়াটের পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আমাদের সুবিধামত যত ওয়াট দরকার সে অনুযায়ী বাতি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারি। যেমন আমরা জানি প্রতি ঘরে একটি করে বাতি দরকার হয় দেখার জন্য। কিন্তু ঘর ভেদে বাতির ওয়াটের কমবেশি হয়, আমাদের খাওয়ার ঘরে, পড়ার টেবিলে ও রান্নাঘরে বেশি আলোর দরকার হয় তাই বেশি ওয়াটের বাতি ব্যবহার করবো। আর যেখানে চোখে চাপ কম পড়ে সেখানে কম ওয়াটের বাতি ব্যবহার করে আমরা বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারি। এছাড়া যখন তখন ঘরে লাইট না জালিয়ে যখন দরকার তখন ব্যবহার করলেই বিদ্যুৎ বিল কম আসবে। অনেকে বর্তমানে রাত জেগে অযথা সময় নষ্ট করে লাইট জ্বালিয়ে তাই রাতে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করার মাধ্যমে বিল কমানো সম্ভব।
বিদ্যুৎ বিল কমাতে ফ্যান বা পাখার সঠিক ব্যবহার
যদিও শীতকালে ফ্যান বা পাখা চালানো হয় না, তাই শীতে কম পরিমান বিদ্যুৎ বিল আসে। কিন্তু গরমে আমরা আমাদের বাসায় প্রতিটা রুমেই পাখা চালু করে রাখি শরির ঠান্ডা রাখার জন্য। কিন্তু সবসময় তো আর পুরো স্পীডে ফ্যান চালানোর দরকার হয় না। তাই আমরা ফ্যানের স্পীড কন্ট্রোলের জন্য রেগুলেটর ব্যবহার করতে পারি। এতে সুবিধা হলো আমার দরকার মতো বাতাস উপভোগ করতে পারবো আর ফ্যানের স্পীড কম থাকার কারনে বিলও কম আসবে। আবার আমাদের ভিতরে অনেকে আছেন যারা ফ্যান চালিয়ে কাথা গায়ে দিয়ে ঘুমান, এটা একটা বাজে অভ্যাস। আপনার যতক্ষন শরীর ঠান্ডা হতে লাগবে আপনি ঠিক ততক্ষন ফ্যান চালাবেন তাহলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
বিদ্যুৎ বিল কমাতে ভালো মানের অ্যাপ্লায়েন্সের ব্যবহার
ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স বলতে আমরা বিদ্যুৎ দিয়ে চলে এমন ডিভাইসগুলোকে বুঝে থাকি। আমরা বর্তমানে বাসাবাড়িতে এসি, রাইস কুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, গ্রাইন্ডিং মেশিন, ইন্ডাকশন কুকার, রেফ্রিজারেটর ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা অনেক সময় এ সকল জিনিস কিনার সময় কমদামি জিনিস খুঁজি। আপনারা সবসময় একটু দাম দিয়ে ভালো পন্যাটি কেনার চেষ্টা করবেন, এতে জিনিস ভালো পাবেন আর বিদ্যুৎ বিলের পরিমান কমে যাবে ভালো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার জন্য।
বিদ্যুৎ বিল কমাতে ফ্রিজের সঠিক ব্যবহার
আমাদের সকলের বাড়িতে ছোট বা বড় একটা হলেও ফ্রিজ আছে। আমরা জানি ফ্রিজ ২৪ ঘন্টা বিদ্যুতের সাথে সংযুক্ত থাকে কিন্তু সবসময়ের বিল কিন্তু উঠেনা। কারন আমরা একটু মনযোগ দিয়ে খেয়াল করলে দেখব ফ্রিজের ভিতর মাঝে মাঝে শব্দ করে যদিও এ শব্দ ফ্রিজের কোম্পানির উপর কমবেশি নির্ভর করে। যখন এ শব্দ হয় তখন কমপ্রেসার লোড নেয়। আর ঠিক তখন ফ্রিজের বিল উঠে থাকে। আবার ফ্রিজ খুললে একটা লাইট জ্বলে উঠে তখন লাইটের বিল উঠে থাকে। এখন কথা হলো আমরা অনেকসময় ফ্রিজ অনেকদিন পরপর পরিষ্কার করি আর এতে ফ্রিজের ভিতর ময়লা জমে। আর এই ময়লার কারনে আমাদের ফ্রিজের ভিতর রাখা খাবার ভালো করে ঠান্ডা হয় না। তাই খাবার ঠান্ডা করতে বেশি বেশি কমপ্রেসার লোড নেয় তাই বিল বেশি আসে। আপনারা মাসে একবার হলেও নিজের ফ্রিজটি পরিষ্কার করে নিবেন।
সকেট, সুইচ ও প্লাগের সঠিক ব্যবহার
আমরা অনেক সময় সকেটের মাঝে বিনা কাজে লাইটের চার্জার, মোবাইলের চার্জার, টেলিভিশনের প্লাগ লাগিয়ে রাখি, যেহেতু এগুলোর ভিতরে একটা সার্কিট থাকে। আর সার্কিটে ব্যবহৃত ছোট ছোট যন্ত্রগুলোতে বিদ্যুৎ টানতে থাকে। আবার আমাদের বাসায় অনেকের পুরাতন সুইচ আছে যেগুলো অফ করলেও বাতি জ্বলে এগুলোর কারনে আমাদের বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। তাই এসকল জিনিস ব্যবহার শেষ হলে বন্ধ করে দিবেন, এতে করে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
মিটার রিটারের কাছে বিদ্যুৎ ইউনিটের পরিমান জেনে নেওয়া
আমাদের সবার বাসায় প্রতি মাসে একজন লোক এসে বিদ্যুৎ বিল লিখে নিয়ে যায়। অনেক সময় তার উপর বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। আমরা জানি ইউনিটের একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জ আছে এ রেঞ্জের বেশি আসলে বিল বেশি আসে। আমরা আমাদের বিলের কাগজের অপজিটে দেখলে খেয়াল করবো রেঞ্জগুলো। মনেকরেন আপনার এমাসে মোট ইউনিট এলো ৯৭ ইউনিট, এখন যদি মিটার রিডার ১০০ ইউনিট লেখে তাহলে আপনার ১০০ ইউনিট রেঞ্জের হিসেবে বিদ্যুৎ বিল করা হবে। আর ১০০ ইউনিটের নিচে আসলে তার নিচের রেঞ্জ হসেবে বিল করা হবে। এর কারনে অনেকের বিল বেশি আসে তাই আপনাদের দায়িত্ব থাকবে মিটার রিডার আসলে সঠিক মানটি তুলে দেওয়া। এতে বিদ্যুৎ বিল অনেক কমে যাবে।
বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ বিল কমানোর আরো কিছু পদ্ধতি:
- ওয়াশিং মেশিনে প্রতিদিন কাপড় ধোয়া। আমরা প্রতি সাপ্তাহে বেশি কাপড়গুলো একদিন ধুয়ে দিলে মেশিন প্রতিদিন চলবে না এতে বিল কম আসবে। এছাড়া আমরা গরমে কাপড়গুলো রোদে দিলে বিল কমানো সম্ভব।
- সোলার সিস্টেমের ব্যবহার করে আমরা বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারি। যদিও সোলার সিস্টেমে প্রাথমিক খরচ অনেক বেশি, তারপরও একবার স্থাপন করা হয়ে গেলে বিভিন্ন লোডগুলো সোলার সিস্টেমে চালিয়ে বিল কমানো সম্ভব।
- যারা এসি ব্যবহার করে থাকেন তারা টাইম সেট করে এসি পরিচালনার মাধ্যমে বিদ্যুতের বিল কমিয়ে আনতে পারেন। এসির তাপমাত্রা ২৬/২৭ এ রাখলে এটা শরীরের জন্য ভালো সহনীয়। তাই এ তাপমাত্রায় এসি ব্যবহার করবেন।
- পিক আওয়ারে (বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত) বাসার বিদ্যুৎ সরঞ্জাম কম ব্যবহার করা। বিশেষ করে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রপাতিগুলো যেমন- হিটার, ইস্ত্রি, পানির পাম্প, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, গিজার, ওয়েল্ডিং মেশিন, এয়ার কুলার ইত্যাদি বন্ধ রাখার মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে আনা সম্ভব।
- যারা আমরা হলরুমে থাকি প্রয়োজন ছাড়া সকল বাতি জ্বালানো বোকামি। আমরা একটি বাতি সবসময় দিতে পরি। আর যখন দরকার হবে তখন সকল বাতি ও ফ্যান চালাতে পারি।
- কম্প্রেসার যুক্ত এসির পরিবর্তে আপনারা ইভাপোরেটিভ কুলার ব্যবহার করবেন।
- CRT টিভির পরিবর্তে বর্তমানে LED টিভি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বিল কমাতে পরেন।
উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url