তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত

তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত- আস্সালামু আলাইকুম, দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আবারো আমাদের সকলের দ্বারপ্রান্তে রমজান মাস। রমজান মাস আল্লাহ তা’আলার এক বিশেষ নিয়ামত তার বান্দাদের জন্য। এ মাসের ইবাদতের মূল্য অন্য মাসের তুলনায় অনেক গুন বেশি। এ মাসে ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া খুবই সহজ। রমজান মাস হলো আত্নশুদ্ধির মাস। পুরো বছরের সময়গুলো কিভাবে কাটাবো তার একটি প্রশিক্ষনের মাস। রমজানে রোজা রাখার পাশাপাশি তারাবির নামাজও একটি গুরুত্বপূর্ন ইবাদত। তারাবির নামাজের মাধ্যমে দীর্ঘসময় নামাজে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়, এতেকরে সারাবছর নামাজ আদায় করা সহজতর হয়ে যায়।

তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত


তারাবির নামাজ কি?

রমজান মাসে এশার ৪ রাকাত ফরজ ও ২ রাকাত সুন্নত নামাজের শেষে বিতের নামাজের আগে ২রাকাত করে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে, এ নামাজকেই তারাবির নামাজ বলে। তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তারাবি শব্দের অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবির নামাজে প্রতি ২রাকাত বা ৪রাকাত পর পর বসে দোয়ার ফাকে বিশ্রাম নেওয়া হয়ে থাকে, তাই এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তারাবির নামাজ মূলত ধিরে ধিরে পড়ার নিয়ম তবে আমাদের দেশের মুসলমান সারাদিনের কর্মব্যস্থতা শেষ করে এ নামাজ পড়ে থাকে তাই একেবারে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করে।

তারাবির নামাজের ফজিলত

রমজানে সকল ইবাদত খুবই দামি, তবে তার ভিতরে তারবির নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। তারাবির নামাজের ফজিলত সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে পূন্য লাভের আশায় রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করেন, তার অতীতের সকল পাপগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি ও মুসলিম)

তারাবির নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়?

আমাদের ভিতরে অনেকের প্রশ্ন থকে তারাবির নামাজের জন্য আলাদা করে কোন সূরা আছে কিনা? তারাবির নামাজ যে কোন সূরা দিয়েই পড়া যায়। বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে দুইভাবে তারাবির নামাজ পড়া হয়ে থাকে। এক হলো খতম তারাবি যে পদ্ধতিতে হাফেজগন ২৭ দিনে ৩০ পারা কুরআন পাঠের মাধ্যমে কুরআন খতম করে থাকে। আরেক পদ্ধতি হলো সূরা তারাবি, এ পদ্ধতিতে ৩০ পারায় যে সকল ছোট ছোট সূরাগুলো আমাদের মনে থাকে সেগুলো পাঠের মাধ্যমে তারাবির নামাজ পড়ানো হয়। তবে তারাবির নামাজ একা একা পড়ার তুলনায় জামাতে পড়ার সওয়াব অনেক। মহিলারা যারা বাসায় একাকি নামাজ পড়েন তারা সূরা ফাতিহার সাথে যে কোন সূরা মিলিয়ে নামাজ পড়ে নিতে পারেন।

তারাবির নামাজ কত রাকাত?

আমাদের ভিতরে অনেকে আছেন যারা তারাবির নামাজের রাকাত নিয়ে কথা বলি, আসলে তারাবির নামাজের কথা নিয়ে অনেক মতামত আছে। তবে ওমর ফারুক (রাঃ) এর যুগে তিনি সকলকে  একত্রিত করলেন এবং একই জামাতে নামাজ আদায় শুরু করলেন তখন থেকেই ২০ রাকাত নামাজ চলে আসছে। তাই তারাবির নামাজ বিশ রাকাত। ২০ রাকাত নামাজ আদায়ের ব্যাপারে সাহাবীগনের ইজমা তথা ঐক্যমত রয়েছে।

তারাবির নামাজের নিয়ত?

বাংলা উচ্চারন: নাওয়াইতু-আন উসালি­য়া লিল্লাহি তা’আলা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআ’লা (***)মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআতের সহিত নামাজ হয় তবে-(***) এর যায়গায় “ইক্বতাদাইতু বি হাজাল ইমাম” বলতে হবে)।

বাংলা নিয়তঃ আমি কিবলামুখি হয়ে দু’রাকাত তারাবির সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামজ এই ইমামের পিছনে আদায় করছি- আল্লাহু আকবার।

তারাবির নামাজের চার রাকাত পর পর কোন দুয়া পড়তে হয়?

আমরা যারা মসজিদে নামাজ আদায় করি তারা হয়ত লক্ষ করি প্রতি চার রাকাত পর পর সকল মুসল্লিগন গুনগুন করে দুয়া পড়তে থাকে। আমাদের হয়তো অনেকের সে দুয়াটি মুখস্থ নেই তাই আমরা বলতেও পারিনা। দুয়াটি নিচে দেওয়া হলো আপনারা আমল করতে পারেন-

“সুবাহানাজিল মুলকি ওয়ালমালাকুতি সুবাহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরুতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুতি- সুবাহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাযি লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুনা ওয়ারব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ।”

তারাবির নামাজ শেষে বিশেষ মুনাজাত

“আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা জান্নাতা ওয়ানায়ুজুবিকা মিনান নার, ইয়া খালিকাল জান্নাতা ওয়ান নার, বিরহমাতিকা ইয়া আযিযু, ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া কারিমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রহিমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খলিকু ইয়া বার: আল্লাহুম্মা আযিরনা মিনান নার, ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু ইয়া মুজির। বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রহিমিন।”

রমজান আমাদের মাঝে একবছর পর ঘুরে এসেছে, আসুন সকলে রমজানে বেশি বেশি করে ইবাদত করি। তারাবির ২০ রাকাত নামাজ সময় নিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ সকলকে ২৯/৩০ টি রোজা রাখার তৌফিক দান করুক। “আমিন”

শেষকথা-

আজকে আপনাদের মাঝে তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। আশাকরি পোস্টটি পড়ে আমল করলে আপনাদের জীবনের অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে যাবে।- ইনশাআল্লাহ।

আরো পড়ুনঃ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url