শবে কদরের ফজিলত ও শবে কদরের নামাজের নিয়ম

শবে কদর কী?

শব হল ফরাসি শব্দ যার অর্থ  হলো রাত, আর কদর শব্দের অর্থ হলো সম্মানিত ও মহামান্বিত। অর্থাৎ শবে কদরের অর্থ হলো সম্মানিত রাত। যদিও কদরের অর্থ পরিমাপ, মহিমা ও ভাগ্য নির্ধারন সহ আরো অনেক অর্থ আছে। আরবীতে শবে কদরের রাতটি অনেকে লাইলাতুল কদর নামেও চিনে থাকে। আর আমাদের দেশে জনগনের কাছে লাইলাতুল কদরের চেয়ে “শবে কদর” নামটি বেশি পরিচিত।

শবে কদরের ফজিলত ও শবে কদরের নামাজের নিয়ম

২০২২ সালের শবে কদর কত তারিখে?

শবে কদরের রাত কোনটি এ নিয়ে মতভেদ অনেক আগ থেকেই হয়ে আসছে। শবে কদরের রাত কবে এটা আমাদের কারোই জানা নেই, তবে মহানবী ( সঃ) বলেছেন, তোমরা শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।- (মুসলিম)। অর্থাৎ ২১ , ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এসকল বেজোড় রজনীতে শবে কদরকে তালাশ করতে হবে। তবে আমাদের দেশের অধিকাংশ আলেমগনের মতে ২৭শে রমজান অর্থাৎ ২৬শে রমজান দিবাগত রাতই হচ্ছে কদরের রাত। তাই দেশের অধিকাংশ লোকজন এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করে থাকে। তবে এ রাত পাওয়ার আরেকটি সহজ পন্থা হলো ই’তিকাফ করা, অনেকে শেষ দশকে ইতেকাফে বসেন, তারা যেহেতু সবসময় ইবাদত বন্দেগী করেন তাই তাদের জন্য শবে কদরের রাত পাওয়াটা অনেক সোজা হয়ে যায়।

শবে কদরের রাতকে কেন নির্ধারিত করে দেওয়া হয়নি?

  • শবে কদরের রাতের ফজিলত যেহেতু হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম তাই এ রাতকে যদি নির্ধারন করে একটা তারিখে দেওয়া হতো অলস ও মূর্খ লোকেরা সারা বছর এ ইবাদতকে গুরত্ব দিয়ে আর কোন ইবাদত করতো না।
  • আবার যদি এ রাতকে একটা নির্দিষ্ট তারিখে দিয়ে দেওয়া হতো আর কেউ যদি কোন কারনে এ রাতে ইবাদত করতে না পারত সে নিজেকে খুব অভাগা মনে করত। তার মতে তার চেয়ে খারাপ আর কেউ নেই বলে বিবেচিত করত নিজেদের তাই এ রাতকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি।
  • আল্লাহ যেহেতু বান্দাদের তার ইবাদত ও আনুগত্যের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাই বান্দা যদি প্রতি বিজোড় রাতে ইবাদত করে তাহলে তার আমলনামায় অনেক সওয়াব লিখা হয়। এবং তার আমলের পরিমানও বেড়ে যায়।

 শবে কদরের ফজিলত

আগের যুগের নবীগনের উম্মতগনের হায়াত অনেক বেশি ছিল, তারা যেহেতু বেশিদিন বেচে থাকত তাই তাদের আমলও বেশি ছিল। আমাদের শেষ নবীর উম্মতগনের যেহেতু হায়াত বা আয়ুস্কাল অনেক কম তাই আল্লাহ আমাদেরকে এমন কিছু রাত নির্ধারন করে দিয়েছেন যেটা যদি আমরা পালন করে থাকি তাহলে অন্য নবীর উম্মতগনের তুলনায় সওয়াব অনেক বেশি হবে। ঠিক এমন একটি রাত হলো শবে কদরের রাত। শবে কদরের রাতকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম রাত বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এ রাতে যাদি আমরা ইবাদত করি তাহলে কতই না সৌভাগ্যবান হতে পারবো আমরা। শবে কদরে আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদের সারাবছরের সকল কর্মকান্ড ফয়সালা করে থাকেন। এ রাত এমন সম্মানিত যে এমন অনেক ব্যাক্তি আছে যাদেরকে কেউ চিনতো না কিন্তু এ রাতের ফয়সালার কারনে সে অনেক সম্মানিত হয়ে যায়। আমাদের দেশে যেমন প্রতি বছর বাজেট পাশ করা হয় দেশ পরিচালনার জন্য, ঠিক তেমনি শবে কদরে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারন করে থাকেন। যাতে প্রতিটি মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিযিক, বৃষ্টি, এ বছর কে কে হজ্জ করবে ইত্যাদিসহ অনেককিছু ফেরেশতাদের কাছে আল্লাহর হুকুমে লিখে দেওয়া হয়। কুরআন মাজিদ এ রাতেই প্রথম নাজিল হয়ে থাকে। তাছাড়া এ রাতে জিব্রাঈল (আ) ফেরেশতাগনের এক বিশাল বহর নিয়ে পৃথিবীর বুকে অবতরন করেন এবং জগতবাসীর জন্য কল্যানকে বিতরন করে থাকেন। এ রাতে অসংখ্য পাপি বান্দাকে আল্লাহ তা’আলা মাফ করে দেন, এ রাতে তওবা কবুল হয়ে থাকে। শবে কদরের রাতে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং ইবাদতে মশগুল মুমিনগনকে ফেরেশতারা সালাম প্রদর্শন করেন। কেউ যদি এ রাতে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় আল্লাহর দরবারে হাজির হবে আল্লাহ তার বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করে দিবেন। তবে এ রাতে যারা আজেবাজে কাজে, কথাবার্তা ও দুনিয়ার অপকর্মে লিপ্ত থেকে জীবন কাটিয়ে দিবে তারা হলো সবচেয়ে বড় হতোভাগা। 

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

শবে কদরের নামাজ নিয়ে অনেকের মাঝে অনেক সন্দেহ থাকে যে, কত রাকাত নামাজ পড়তে হবে? নামাজে কোন কোন সূরা তিলাওয়াত করবো? সারারতই কি নামাজে কাটিয়ে দিতে হবে নাকি?

শবে কদরে আমরা তারাবির নামাজ শেষ করে বিতরের নামাজ না পড়ে দুই রাকাত করে নফল নামজের নিয়ত করে আপনাদের যতখুশি তত রাকাত নামাজ পড়তে পারেন। তবে নামাজ তাড়াতাড়ি পড়ে রাকাতের সংখ্যা না বাড়িয়ে নামাজের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে হবে। শবে কদরের নামাজের নিয়ত-

“আমি কেবলামুখী হয়ে শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করছি, আল্লাহু আকবার।”

অনেকে শবে কদরে সূরা ফাতিহার সাথে শুধু সূরা কদর তিলাওয়াত করে নামাজ শেষ করেন, আসলে এর কোন ভিত্তি নেই আপনারা সূরা ফাতিহার সাথে যে কোন সূরা মিলিয়ে নামাজ পড়তে পারেন। যার যেই সূরা মুখস্থ আছে তারা সেই সূরা দিয়েই আমরা শবে কদরের নামাজ পড়ে নিতে পারি।

শবে কদরের রাতে কি সারা রাতই নামাজ পড়তে হবে এমন কোন কথা নেই যার শরীরে যতটুকু পারা যায় ততটুকু নামাজ আদায় করলেই হয়ে যাবে। যেহেতু সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীর ক্লান্ত থাকে তাই ইচ্ছেমত নামাজ আদায় করলেই হবে। তবে এশার নামাজ যদি জামাতের সহিত পড়া হয় তাহলে তো সারারাত নফল এবাদতের সওয়াব হবেই।

শবে কদরের রাতে আমাদের করনীয় কাজসমূহ

  1. বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা, যেমন- তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মসজিদ, আউয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবির নামাজ, সালাতুল হাজত ইত্যাদি সহ অন্যান্য নফল নামাজ পড়া।
  2. নামাজ তাড়াহুড়া করে না পড়ে নামাজের কুরআন তেলাওয়াত বড় করা এবং রুকু,  সিজদায় বেশি সময় প্রদান করা।
  3. শুধু নামাজ পড়াকেই প্রাধান্য না দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করা। কারন কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াব অনেক বেশি। কুরআন তিলাওয়াত সর্বত্তম ইবাদত।
  4. বেশি বেশি পরিমান দুরুদ-শরীফ পাঠ করা।
  5. বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা, রাতের গভিরে জিকির করা।
  6. কবর জিয়ারত করা, কবরের সকল মুসলমান নর ও নারীর জন্য দোয়া করা।
  7. পৃথিবীর যে অবস্থা এ অবস্থায় সকল মানুষের ঈমান ও আমল বৃদ্ধির জন্য দোয়া করা ইত্যাদি।

শবে কদরের রাতে আমাদের বর্জনীয় কাজসমূহ

  1. ইবাদত বন্দেগি বাদ দিয়ে বিনা কারনে ঘোরাঘুরি করা।
  2. বন্ধু বান্ধবের সাথে অকারনে গল্পগুজব করা।
  3. অন্য কারো ইবাদতে বিঘ্নতা ঘটানোর চেষ্টা করা।
  4. নিজের মুখের কথা দ্বারা অন্য কাউকে কষ্ট প্রদান করা।
  5. রাত জেগে ইবাদতের নাম করে মোবাইল চালানোকে প্রধান্য দেয় ইত্যাদি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে লাইলাতুল কদরের মর্যাদা অনুধাবন করার তৈফিক প্রদান করুন, যাতে করে আমরা সকলে এ রাতে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি এবং আমাদের বিগত জীবনের সকল প্রকার খারাপ কাজের জন্য তওবা করে খাঁটি মুসলমান হতে পারি। -আমিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

উপায় কী এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url